গুগল এডসেন্স অনুমোদন না হওয়ার ১১ টি কারণ আলোচনা করবো। যারা ইতিপূর্বে গুগল এডসেন্স এ অ্যাপ্লাই করে অনুমোদন করতে ব্যর্থ হয়েছেন তারা উপরের টিসগুলি ভালভাবে পড়লে পূর্বে আপনি কোথায় ভূল করেছেন সেটি সহজে বেরকরতে করতে পারবেন। অন্যদিকে যারা এখন এডসেন্স এ এপ্লাই করেননি তারা ইনশাআল্লাহ এই টিপসগুলি অনুসরণ করলে খুব সহজে প্রথমবারেই অনুমোদন করতে সক্ষম হবেন। আমি এখন ১১ টি কারন নিচে বিস্তারিত আলোচনা করবো-
০১। ওয়েব সাইট এর বয়স কম হওয়াঃ
গুগল এডসেন্স এ আবেদন করার পূর্বে আপনার ওয়েবসাইটের বয়স কমপক্ষে ছয় মাস হতে হবে। বিশেষ করে এশিয়া মহাদেশের কোন জায়গা থেকে আবেদন করার জন্য ওয়েবসাইটের বয়স ৬ মাস পূর্ণ না হওয়া অবধি আবেদন করা যাবেনা । সুতরাং অয়েবসাইট এর বয়স ছয় মাস পূর্ণ হওয়ার পরে গুগল এডসেন্স এর জন্য আবেদন করা উচিত। তবে ওয়েবসাইটের বয়স কমপক্ষে এক বছর হলে ভালো হবে।
০২। পর্যাপ্ত কনটেন্ট না থাকাঃ
একটি ওয়েবসাইটের জন্য কনটেন্ট হচ্ছে জীবন। ওয়েবসাইটে যত ভালমানের কনটেন্ট থাকবে তত বেশী ভিজিটর পাবেন। গুগল এডসেন্স এ আবেদন করার পূর্বে যেকোনো ওয়েবসাইটে কমপক্ষে ২০-২৫ টি ভালমানের ইউনিক পোষ্ট থাকতে হবে। ওয়েবসাইটের প্রত্যেকটি বিভাগে কমপক্ষে ৫-৬ টি করে পোষ্ট থাকতে হবে।
০৩। ভালো মানের কনটেন্টঃ
ওয়েবসাইটে শুধুমাত্র পর্যাপ্ত কনটেন্ট থাকলেই হবে না, পোষ্টগুলি অবশ্যই ভালমানের হতে হবে। যেমনজেমন্মন কিছু লেখা ওয়েবসাইটে পোস্ট করে রেখে, ভাবা হয় পর্যাপ্ত কনটেন্ট আছে তাহলে এডসেন্স পাবেন না।
ওয়েবসাইটে যখন ভালমানের কনটেন্ট থাকবে তখন ব্লগটি সবার কাছে গ্রহনযোগ্য হবে। যার ফলে গুগল এ্যাডসেন্স পাওয়ার পথ সহজ হবে।
০৪। ইউনিক কনটেন্টঃ
ইউনিক কনটেন্ট ব্লগিং এবং গুগল এ্যাডসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে কমন ও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আপনি যদি ২০/২৫ ইউনিক কনটেন্ট শেয়ার করতে পারেন তাহলে গুগল এডসেন্স একাউন্ট অনুমোদন হবেই হবে।
০৫। অনুপযুক্ত কনটেন্টঃ
কিছু কনটেন্ট রয়েছে যেগুলি ব্যবহার করা গুগল পলিছি এর বাহিরে। যেগুলি ব্যবহার করলে সাধারণ মানুষের ক্ষতি হতে পারে। এ ধরনের কনটেন্ট ব্যবহার করে যত ট্রাফিকই পান না কেন ব্লগের এডসেন্স অনুমোদন হবে না। নিচে দেখুন-
পর্ণগ্রাফি/এডাল্ট কনটেন্ট।
হ্যাকিং বা ক্রাকিং টিপস।
থার্ড পার্টি ভিডিও শেয়ারিং ব্লগ।
বিভিন্ন মাদক জাতীয় দ্রব্যের প্রচার বা প্রসার।
এলকোহল দ্রব্যের প্রতি আকৃষ্ট করা।
পরস্পর বিরোধী কনটেন্ট।
মারাত্মক অস্ত্রের বিজ্ঞাপন। ইত্যাদি
০৬। পর্যাপ্ত ট্রাফিক না থাকাঃ
আপনার ব্লগে যদি পর্যাপ্ত ট্রাফিক না থাকে তাহলে কোনভাবেই গুগল এডসেন্স অনুমোদন হবে না। ব্লগে যখন পর্যাপ্ত পরিমানে অরগানিক ট্রাফিক থাকবে তখন খুব সহজেই এ্যাডসেন্স অনুমোদন হবে। কারন গুগল চায় এমন কাউকে এ্যাডসেন্স একাউন্ট দিতে যার ব্লগের মাধ্যমে তারা ভিজিটরদের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে লাভবান হতে পারে।
আপনি যখন ভালভাবে এসইও মেনে ভালমানের ইউনিক কনটেন্ট শেয়ার করবেন তখন ট্রাফিক অটোমেটিক্যালি বাড়তে থাকবে। তবে একটা ব্যাপার মনে রাখবেন কোন প্রকার পেইড ট্রাফিকের মাধ্যমে ভিজিটর বৃদ্ধি করে কোন লাভবান হতে পারবেন না। যখন কোন প্রকার সোসিয়াল মিডিয়া ছাড়া শুধুমাত্র গুগল সার্চ ইঞ্জিন হতে পর্যাপ্ত পরিমানে ভিজিটর পাবেন তখন এডসেন্স আপনাকে সহজে অনুমোদন করবে।
০৭। ওয়েবসাইটের ডিজাইন ভাল না হওয়াঃ
ওয়েব সাইটি হতে হবে সিম্পেল এবং বেশি কালার ফুল হয়া যাবে না। কারন এতে ভিজিটরের আর্টিকেল পড়তে সমস্যা হবে। তাছারা ওয়েবসাইটি যদি ভাল ডিজাইনের না হয় এবং গুগল এডসেন্স কোড বসানোরমত পর্যাপ্ত জায়গা না থাকে তাহলে কিছুতেই এ্যাডসেন্স অনুমোদন করবে না। কারণ আপনার ব্লগের প্রয়োজনীয় জায়গায় বিজ্ঞাপন বসিয়ে পরিষ্কারভাবে ভিজিটরদের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করাতে না পারলে গুগুলের কোন লাভ হবে না। কাজেই ব্লগের ডিজাইন অবশ্যই রেপনসিব স্বচ্ছ এবং এডসেন্স বিজ্ঞাপন ব্যবহারের উপযোগী হতে হবে।
০৮। টপ লেভেলে ডোমেন ব্যবহার না করাঃ
বিশেষ করে এখনকার সময়ে Google এডসেন্স অনুমোদন পাওয়ার ক্ষেত্রে ডোমেইন অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। অধীকাংশ নতুন ব্লগাররা তাদের ব্লগে ভালমানের ডোমেন ব্যবহার না করে Sub-Domain (Blogspot.com অথবা WordPress.com) ব্যবহার করে Google এডসেন্স এর জন্য আবেদন করেন। যার ফলে দেখা যায় গুগল তাদের আবেদন সরাসরি না করে দেয়। (এখন আবার বলতে পারেন blog.hostcmt.com এটা তো Sub-Domain তাহলে এখানে গুগল অ্যাড দেয় কেন? এর কারন হচ্ছে hostcmt.com মেইন Domain এ গুগল এডসেন্স অনুমোদন পাওয়া। )
তবে এক সময় ছিল যখন Sub-Domain দিয়েও খুব সহজে এডসেন্স অনুমোদন করা সম্ভব হত, কিন্তু সম্প্রতি এ বিষয়টি বেশ কঠিন হয়েগেছে। কাজেই বিষয়টি সহজ করার জন্য ব্লগিং শুরু করার পূর্বে একটি ভালমানের প্রিমিয়াম ডোমেইন কিনে নেয়াটাই উত্তম হবে।
০৯। ভালো মানের হোস্টিং বেবহার না করাঃ
ওয়েব সাইট এর হোস্টিং হতে হবে ভালো মানের। আপ্টাইম থাকতে হবে কম পক্ষে ৯৯.০০% – ৯৯.৯৯% যদি আপটাইম ভালো না থেকে তাহলে ওয়েব সাইট মাঝে মাঝে বন্ধ দেখাবে। আর সে সময় যদি গুগল এডসেন্স টিম আপনার ওয়েব সাইট রিভিউ এর জন্য আসে। তাহলে আপনি কি এডসেন্স অনুমোদন পাবেন? নিশ্চয়ই না। আবার হোস্টিং স্লল হলেও হবেনা । এতে ভিজিটর বিরক্তত হয়ে ওয়েব সাইটে আসবে না ।
১০। Privacy Policy ও Terms of Service Inform না থাকাঃ
যে কোন ওয়েব সাইটের জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পেজ যেমন- About হে, Privacy-Policy এবং Contact Us পেজ রাখা আবশ্যক। কারণ এগুলির মাধ্যমে এডসেন্স আপনার ব্লগ সম্পর্কে জেনে নিয়ে নিশ্চিত হতে পারবে আসলে ব্লগটার Owner আপনি কি না। কয়েক বৎসর আগে Google এডসেন্স Team একটি নিয়ম করেছিল যে, প্রত্যেকটি ব্লগের অবশ্যই Privacy Policy পেজ রাখতেই হবে। তারই নিয়মে অবশ্যই বাকি পেজগুলিও রাখাটা ভাল।
১১। অন্য বিজ্ঞাপন ব্যবহারঃ
আপনি যদি অয়েবসাইটে কোন ধরনের বিজ্ঞাপন ব্যবহার করে থাকেন তাহলে গুগল এডসেন্স এ আবেদন করার সময় অবশ্যই সেগুলি দূর করে নিবেন। কারণ গুগল এডসেন্স টিম আপনার ব্লগটি রিভিউ করার সময় কোন ধরনের বিজ্ঞাপন দেখতে পেলে এডসেন্স অনুমোদন করবে না। তাছাড়া এটি এডসেন্স পলিছি এর আওতায়ও পড়ে না।
এ ছাড়াও গুগল এডসেন্স অনুমোদন না হওয়ার আরও বেশ কিছু কারণ রয়েছে। যেগুলি সম্পর্কে এখন বিস্তারিত আলোচনা করা সম্ভব নয়। নিচে আমরা সংক্ষেপে বিষয়গুলি তুলে ধরছি।
ক। আবেদনকারীর বয়স ১৮ বৎসর না হওয়া।
খ। Evil সাইটে ব্লগের লিংক করা থাকলে।
গ। ব্লগের কনটেন্টের ভাষা সাপোর্ট না করলে।
ঘ। ব্লগটির প্রকৃত মালিক নিজে না হলে।
ঙ। ব্লগের Navigation সহজে বুঝা না গেলে।
চ।পূর্বে কখন এডসেন্স Account ব্যান হলে।
ছ। সাইট Malware এ আক্রান্ত হলে।
জ। বাচ্ছাদের Privacy Protection Act এর বহিঃভূত হলে।
ঝ। সঠিকভাবে এডসেন্স Policy অনুসরণ না করলে।
যারা ইতিপূর্বে গুগল এডসেন্স এ অ্যাপ্লাই করে অনুমোদন করতে ব্যর্থ হয়েছেন তারা উপরের টিসগুলি ভালভাবে পড়লে পূর্বে আপনি কোথায় ভূল করেছেন সেটি সহজে বেরকরতে করতে পারবেন। অন্যদিকে যারা এখন এডসেন্স এ এপ্লাই করেননি তারা ইনশাআল্লাহ এই টিপসগুলি অনুসরণ করলে খুব সহজে প্রথমবারেই অনুমোদন করতে সক্ষম হবেন।
সূত্রঃ গুগল, ইন্টারনেট বিভিন্ন ব্লগ, পারসোনাল এক্সপিরিয়েন্স।